রাজধানীর পল্টনে পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের ঘটনায় নব্য জেএমবির আরও ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা নব্য জেএমবির সামরিক শাখার স্লিপার সেলের সদস্য। ওই চার জঙ্গি বেশ কয়েকটি হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেছিল। তাদের কাছ থেকে ইন্টারনেটের গোপন চ্যানেলে নির্দেশনা পেয়ে আইইডি বানাত নব্য জেএমবির আরেকটি গ্রুপ। এ ক্ষেত্রে টেলিগ্রাম ও ওয়্যারের মতো যোগাযোগ চ্যানেল ব্যবহার করত তারা। চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরার আজমপুর থেকে এই চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তারা হলো- মামুন আল মোজাহিদ সুমন, আল আমীন ওরফে আবু জিয়াদ, মোজাহিদুল ইসলাম রোকন ওরফে আবু তারিক ও সারোয়ার হোসেন রাহাত। গতকাল শুক্রবার তাদের ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ২৪ জুলাই রাত ৯টার দিকে পল্টন মোড়ে শক্তিশালী আইইডির বিস্ফোরণ ঘটে। আশপাশে লোকজন না থাকায় এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশের একটি টিমের অবস্থান ছিল। এ ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা হয়। এর পরদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলিস্তানে পুলিশের মোটরসাইকেলে গ্রেনেড সদৃশ বস্তু রেখে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট গিয়ে দেখে সেটির ভেতরে কোনো বিস্ফোরক নেই। সিটিটিসির কর্মকর্তাদের ধারণা, দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য জঙ্গিরা গ্রেনেড সদৃশ বস্তুটি রেখেছিল।
এর আগে গত বছর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘিরে এ ধরনের পাঁচটি আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া চট্টগ্রামেও প্রায় একই ধরনের একটি ঘটনা এবং খুলনায় আরও দুটি ঘটনা ঘটে। সবগুলো ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কথিত ম্যাগাজিন আমাকের বরাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গিবাদ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্সে আইএসের দায় স্বীকারের খবর দেয়। পরে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নব্য জেএমবির সদস্যদের গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তখন সিটিটিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মূলত ছোট ছোট গ্রুপে (উলফ প্যাক) বিভক্ত জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নভাবে পুলিশকে টার্গেট করে এসব হামলা চালিয়েছিল। পুলিশের মনোবলে আঘাত হানাই ছিল তাদের লক্ষ্য।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া স্লিপার সেলের চার জঙ্গি মূলত গাজীপুর কেন্দ্রিক। তাদের সবার বাড়িও গাজীপুরে। তারা নিজেরা হামলার পরিকল্পনা তৈরি এবং বিস্ফোরক বানানোর কৌশল উদ্ভাবন করে অন্য গ্রুপের কাছে পাঠাত। ওই গ্রুপটি পরে আইইডি বানাত। এসব আইইডি হামলার কাজে ব্যবহার করা হতো। তাদের মধ্যে সুমন ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক করেছে। বাকি তিনজন খুব বেশি পড়াশোনা করেনি। তারা গাজীপুরে এক ব্যক্তিকে জবাই করে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা।
এর আগে পল্টনে বিস্ফোরণের ঘটনায় গত ১২ আগস্ট সিলেট থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিটিটিসি। তারা হলো- শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান, সানাউল ইসলাম সাদি, রুবেল আহমেদ, আবদুর রহিম জুয়েল ও সায়েম মির্জা। তারা পাঁচজন মূলত সিলেট কেন্দ্রিক নব্য জেএমবির তৎপরতায় যুক্ত ছিল। এই পাঁচজনের সঙ্গে সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, নাইমুজ্জামানের নেতৃত্বে নব্য জেএমবির এই সেলটি কাজ করত। তারা ঢাকার পল্টনে ও নওগাঁয় একটি মন্দিরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। নব্য জেএমবির এই সেলটি সিলেটের শাহজালাল মাজারে বোমা রেখে আসে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ওই বোমাটি বিস্ফোরিত হয়নি।
সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া চার জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, চার জঙ্গির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
Leave a Reply